এক
‘এ-জন্যই
ছোট প্লেন আমার ভাল্লাগে না,’ বিরক্ত হয়ে মুখে হাত বুলাল মুসা। ‘খালি নাচে!’ যেন
তার কথা প্রমাণ করতেই শাঁ করে অনেকখানি নিচে নেমে এলো ছোট বিমানটা, দড়ি কেটে হঠাৎ
ছেড়ে দেওয়ার মতো। পাক দিয়ে উঠল তার পেটের ভেতর।
‘এসে গেছি,’ হেসে
বলল পাইলটের সিটে বসা কিশোর। ‘ওই যে লাবক এয়ারপোর্ট। গাড়ি এলে ঘণ্টা দুয়েকের
ভেতরেই র্যাঞ্চে পৌঁছে যাব।’
‘কী দরকারটা ছিল এই
বাদামের খোসায় বসে অর্ধেক টেক্সাস পাড়ি দেয়ার? একটা বড় লাইনারে করে চলে এলেই
পারতাম। এখন আবার লাবকে নেমে গাড়িতে করে নিউ মেক্সিকো, হাড়গোড় আস্ত থাকলেই হয়।’
‘তা থাকবে। প্লেন
চালানোর এরকম একটা সুযোগ পেয়ে গেলাম, ছাড়তে কি ইচ্ছে করে, বলো?’
গরম বাতাসে আবার
দুলে উঠল প্লেন।
সিটের কিনার খামচে
ধরল মুসা, সাদা হয়ে গেল হাতের আঙুল। ‘সেটা বরং এরচেয়ে অনেক আরামের হতো।’ জানালার
বাইরে তাকাল সে। ‘তোমাকে স্টুডেন্ট পাইলটের লাইসেন্স দিয়েই ভুলটা করেছে। সারাক্ষণ
এখন প্লেন নিয়েই থাকবে...ওড়া আর ওড়া...সর্বনাশ! সামনে পাহাড়। লাগিয়ে দিও না।’
‘আরে নাহ্। পাহাড় না
ওটা, পর্বতই। চূড়াটা দেখেছ কেমন টেবিলের মতো চ্যাপ্টা? দারুণ রানওয়ে হবে। ঠেকায়
পড়লে ওখানে আরামসে নামিয়ে ফেলতে পারব প্লেন।’
নিরাশ ভঙ্গিতে মাথা
নাড়ল মুসা। ‘ভেবেছিলাম নিউ মেক্সিকোতে এসে চেহারা কিছুটা নরম হবে। কই? একই রকম
পাহাড়-পর্বত। রুক্ষ। শুকানো। কিছু মরা গরুর শুকনো হাড্ডি দেখার শখ আমার একটুও নেই।
এই রহস্যের কিনারা এখানকার শেরিফই করতে পারত। আসলে এসেছ প্লেন চালাতে, তাই না?’
‘তা বলতে পারো। তা
ছাড়া জ্যাক কারসন চাচার বন্ধু। চাচা কথায় কথায় সেদিন বলল, কারসন নাকি একবার তার
প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন। আমাকে দিয়ে সেই ঋণ যদি কিছুটা শোধ হয়...আর তুমি যে বলছ শুধু
কয়েকটা মরা গরু, তা কিন্তু নয়। আমি শিওর ভেতরে আরও কোনো জটিল রহস্য রয়েছে। এত সহজে
হার মানার পাত্র নন কারসন। পঞ্চাশ হাজার একর জমির মালিক। এ সাইজের একটা র্যাঞ্চ
যিনি চালান...। কোথাও একটা গোলমাল রয়েছে, বুঝলে।’ থেমে গেল হঠাৎ কিশোর। ‘এসে
গেছি।’
নাক নিচু করে দিল
বিমানের। সামনে মাঠের ওপর দিয়ে চলে গেছে রানওয়ে। পশ্চিম আকাশের রঙ ঘোলাটে বাদামি।
‘ধূলিঝড় আসছে
বোধহয়,’ কিশোর বলল। সিমেন্টের রানওয়েতে চাকা স্পর্শ করতেই নেচে উঠল টুইন ইঞ্জিন
হালকা বিমানটা, তারপর মসৃণ গতিতে ছুটে চলল একটা দামি গাড়ির মতো। প্লেন থামিয়ে,
ইঞ্জিন বন্ধ করে, ব্যাগ নিয়ে নামল কিশোর। মুসা আগেই নেমে পড়েছে। বিমানটা ভাড়া করে
এনেছে ওরা। সময়মতো কোম্পানির পাইলট এসে ফেরত নিয়ে যাবে।
টারমিনালে ঢুকল দুই
গোয়েন্দা।
‘কিশোর?’ মহিলা
কণ্ঠের ডাক শোনা গেল। ‘মুসা?’
ঘুরে তাকাল ওরা।
ডাকছেন হালকা-পাতলা
শরীরের এক প্রৌঢ়া। পরনে জিনস, গায়ে এমব্রয়ডারি করা একটা ওয়েস্টার্ন শার্ট। তুষারের
মতো সাদা চুল।
হেসে এগোল কিশোর।
‘আমি কিশোর পাশা।’
‘আমি অ্যান্ডি
কারসন,’ ছোট্ট হাতটা বাড়িয়ে দিলেন মহিলা। চেপে ধরলেন কিশোরের হাত। অবাক হলো সে।
কাঠির মতো আঙুলগুলোতে এত শক্তি! ‘জ্যাক আসতে পারেনি বলে দুঃখ প্রকাশ করেছে।’ কণ্ঠস্বর
খাদে নামালেন মহিলা। ‘র্যাঞ্চে আরেক সমস্যা হয়েছে।’
‘কী?’ কিশোর জানতে
চাইল।
‘চলো, যেতে যেতে
বলব।’
বিশাল একটা দামি
গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে টারমিনালের বাইরে। ট্রাংকে ব্যাগগুলো তুলে রাখল দুই গোয়েন্দা।
কিশোর সামনের সিটে বসল, মিসেস কারসনের পাশে। মুসা বসল পেছনের সিটে। পার্কিং লট থেকে
বেরোলেই খোলা অঞ্চল। সামনে পশ্চিম আকাশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে মস্ত একটা বাদামি দাগ।
‘আবার আসছে!’ নাক
কুঁচকে বললেন মহিলা। ‘এই ঝড়টড়গুলো এত বিচ্ছিরি লাগে না আমার! সব চিহ্ন মুছে দিয়ে
যাবে।’
‘চিহ্ন?’ ভুরু
কোঁচকাল কিশোর।
“ ” - Rakibul Dolon
“ ” - Abir Israq