এক
ফ্লোরিডা
বিচ।
চারপাশে তাকাল গোয়েন্দাপ্রধান কিশোর পাশা। নির্জন
সাদা সৈকতের সীমানায় ঝালর তৈরি করছে যেন পামগাছের সারি।
ঘামে ভেজা চুলগুলো কপালের ওপর থেকে সরিয়ে দিল মুসা
আমান। কড়া রোদ লাগছে মুখে।
সকালে হোটেল থেকে পরে আসা সোয়েট শার্ট আর জিনসের
প্যান্ট সিদ্ধ করে ফেলার হুমকি দিচ্ছে এখন তাকে। কিন্তু তখন আবহাওয়া ছিল অন্য রকম।
পথে এক জায়গায় তো তুষারঝড়ই পেরোতে হয়েছে।
মুসার পরনেও একই পোশাক, শুধু তার সোয়েট শার্টের
বুকে ছাপা একজন চীনা কুংফুস্টারের ছবি। এ জামাটা পরতে সে গর্বই বোধ করে। কারাতে ব্রাউন
বেল্ট পেয়েছে সে। আশা আছে, একদিন না একদিন ব্ল্যাক বেল্ট আসবেই।
‘কেসটা তাড়াতাড়ি শেষ করতে না পারলে,’ কিশোর বলল,
‘এবারের ছুটিটা মাঠে মারা যাবে। বেড়াতে আর যেতে পারব না।’ দরদর করে ঘামছে সেও। সাঁতারু
আর সূর্যস্নানার্থীরা এখনও এসে পৌঁছায়নি এই সৈকতে। ওদের আগে আসার জন্যই তো এই পরিশ্রম,
পাঁচ মাইল পথ প্রায় দৌড়ে পেরিয়েছে।
‘সুইমসুট পরে এলেও হতো, অন্তত পানিতে তো নামতে
পারতাম,’ মুসা বলল। আমেরিকার দক্ষিণাঞ্চলের ঝকঝকে পরিষ্কার আকাশের দিকে তাকিয়ে দুহাত
ছড়াল সে, টানটান করে শক্ত হয়ে যাওয়া পেশিগুলোকে ঢিল করতে চাইল, প্লেনে বসে থেকে থেকে
জমাট বেঁধে গেছে যেন। ‘কিশোর, তুমি শিওর, সাঁতারের সময় পাব না আমরা?’
‘না, পাব না।’
‘একেই বলে কপাল। যেখানেই যাই, ঝামেলায় জড়াই। শান্তিতে
ছুটি কাটানো আর হয় না।’ কপাল ডলল সে। ‘তবে ইচ্ছে করলে কিছুটা আনন্দ করে নিতে পারি আমরা।
একটা বিচ হাউস ভাড়া নিতে পারি সহজেই,’ কিশোরের দিকে তাকিয়ে হাসল, ‘যদি খালি তোমার হাতের
সুটকেসটা একটু ঝাড়া দাও...’
‘হবে না,’ গম্ভীর হয়ে বলল কিশোর। ‘এ টাকা খরচ করার
জন্য নয়...’
‘তোমাকে নিয়ে এই এক সমস্যা। এতটা কড়া না হলেও চলে...’
‘চলে না। তাহলে গোয়েন্দাগিরি করতে গিয়ে অনেক আগেই
মারা পড়তাম। তুমি যে রকম খামখেয়ালিপনা করো, সিরিয়াস না হয়ে উপায় আছে আমার?’
‘না, নেই। প্লেন থেকে নামার পর ব্যাগটাকে যেভাবে
আঁকড়ে ধরে ছুটে এসেছ এখানে, যে কেউ দেখলে ভাববে ওটাতেই তোমার জীবন-মরণ।’ নিজেদের কাপড়ের
ব্যাগগুলোর পাশে সৈকতে পড়ে থাকা চামড়ার দামি অ্যাট্যাশে কেসটার দিকে তাকাল মুসা। ‘কাকে
ভয় তোমার, আমাকে? ভেবেছ গোল্ড কোস্টে পৌঁছেই ব্যাগটা কেড়ে নিয়ে রেস্টুরেন্টে ছুটব খরচ
করার জন্য?’
‘তোমাকে বিশ্বাস নেই,’ কিশোর হাসল। ‘খাবার দেখলে
তো আর হুঁশ থাকে না।’
‘এত গাড়োল মনে করো নাকি আমাকে,’ বন্ধুর হাসিটা
ফিরিয়ে দিল মুসা। ‘আচ্ছা, ঠিক আছে, খরচ না হয় না-ই করতে দিলে, আরেকবার চোখের সাধ তো
মেটাতে দেবে?’
দ্বিধা করল কিশোর। তারপর বলল, ‘বেশ, তবে এক সেকেন্ডের
বেশি না।’ বলতে বলতে কেসটার কাছে হাঁটু মুড়ে বসে পড়ল সে। তালা খুলে ডালা তুলল।
প্রথমবার যেমন তাকিয়েছিল, এবারেও স্তব্ধ হয়ে থরে
থরে সাজানো কেসবোঝাই নোটের বান্ডিলের দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে রইল দুজনে।
‘হয়েছে,’ বলেই কেসের ডালা নামিয়ে দিল কিশোর। কট
করে লেগে গেল তালা।
এত তাড়াতাড়ি বন্ধ করায় প্রতিবাদ করতে যাচ্ছিল মুসা,
এ সময় কানে এলো গাড়ির হর্ন। পাম গাছগুলোর ওপাশে : একবার... দুবার... তিনবার।
ঘড়ি দেখল কিশোর। ‘একেবারে কাঁটায় কাঁটায় হাজির
হয়েছে।’ সতর্ক হয়ে উঠেছে তার চোখের তারা। পকেট থেকে একটা হুইসেল বের করে তিনবার বাজাল।
অপেক্ষার পালা। সব নীরব। যেন স্তব্ধ হয়ে গেছে।
মিনিটখানেক পর পামের সারি থেকে বেরিয়ে এলো শোফারের পোশাক পরা একজন ছোটখাটো মানুষ। কিশোর
ও মুসাকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য হাত নেড়ে ইশারা করল। আদেশ না মেনে উপায় নেই ওদের। লোকটার
আরেক হাতে বিশাল একটা নিকেল প্লেটেড অটোম্যাটিক পিস্তল, বিকেলের উজ্জ্বল রোদে ঝকঝক
করছে, নলের মুখ স্থির হয়ে আছে ওদের দিকে।
লোকটার কাছে পৌঁছল ওরা।
‘নিশ্চয় কিশোর আর মুসা,’ রুক্ষকণ্ঠে লোকটা বলল।
কথায় ব্রিটিশ টান।
‘হ্যাঁ,’ জবাব দিল কিশোর। ‘আপনার কী নাম?’ কিশোরও
ভদ্রতা দেখাল না।
“ ” - Robi User
“ ” - Hridoy Sarker
“অসাধারণ কাহিনী! ” - MD. ZIHAD HOSSEN
“Just amazing ” - Nusrat Jahan