বাংলাদেশ আমাদের দেশ। নিজের দেশকে তো তোমরা ভালভাবেই
জান। কে না জানে বাংলাদেশে ফুল আছে। ফল আছে। আছে পাখি। কত রঙ-বেরঙের ফুল। কত রকমের
ফল। কত গান-গাওয়া পাখি। আম, জাম, কাঁঠাল, নারকেল আরো কত কি ফল। তার লেখাজোখা নেই। কত
কি ফুলের সুবাসে বাতাস মউ মউ করে। গোলাপ, চামেলি, চাঁপা, জুঁই, হাসনাহেনা, শেফালি আরো
কত কিছু। সেই সব ফলের গাছে আর ফুলের গাছে কত পাখির ভিড়। শালিক কোকিল চড়ুই কাকাতুয়া
এবং আরো অনেক পাখি।
আমাদের দেশে নদী আছে। খাল আছে। আছে বিল। সেই নদীতে,
সেই বিলে আর সেই খালে কত নৌকা ভেসে বেড়ায়। কত রকমের নৌকা। ছিপ নৌকা, পানসী নৌকা, গয়না
নৌকা আর সামপান নৌকা। কত মাছ পানিতে খেলা করে। রুই, কাতল, বোয়াল, শোল, গজার, পাবদা
এবং আরো অনেক রকমের মাছ।
আমাদের বাংলাদেশ থেকে অনেক দূরে আরব দেশ। সেই দেশ
বাংলাদেশের মত নয়। সেখানে নদী নেই। খাল নেই। বিল নেই। সেখানে ধু-ধু মরুভূমি। চারদিকে
ছড়ানো শুধু বালু আর বালু। বালুর মাদুর যেন বিছানো সবখানে। ডাইনে বালু। বাঁয়ে বালু।
দু’চোখ
যতদূর যায়, শুধুই বালু। সেই বালুর দেশে টিয়া নেই,
শালিক নেই, কোকিল নেই, নেই কাকাতুয়া। গনগনে গরম হাওয়ায় পাখিরা থাকতে পারে না। সেখানে
গোলাপ ফোটে না, চামেলি ফোটে না, চাঁপা ফোটে না, জুঁই ফোটে না, ফোটে না হাসনাহেনা, ফোটে
না শেফালি। গরম বালুতে পা রাখলে পা পুড়ে যায়।
সেই বালুর দেশে আছে উট। সেখানে যারা থাকে তারা
উটের পিঠে চড়ে যাতায়াত করে। উটকে তাই ‘মরুর জাহাজ’
বলা হয়। আর আছে দুম্বা আর মেষ। সেখানে আমগাছ নেই। জামগাছ নেই। কাঁঠাল গাছ নেই। আছে
শুধু খেজুর গাছ। আর নাম-না-জানা কিছু কিছু কাঁটা গাছ।
আজ থেকে এক হাজার চারশ’
বছর আগের কথা। সে সময় আরবের লোকেরা মোটেই সৎ ছিল না। একজনের ভালো আরেকজন দেখতে পারত
না। তারা সব সময় মারামারি করত। খুনাখুনি করত। একবার কারো সাথে বিবাদ হলে বছরের পর বছর
সেই বিবাদ চলত। বংশ ধরে সেই বিবাদের জের চলতে থাকত। তারা চুরি করত। ডাকাতি করত। লুট
করত মেয়েদের জীবিত কবর দিত। কথায় কথায় তলোয়ার বের করত। তাদের মনে কোনো দয়ামায়া ছিল
না। হাটে বাজারে লোক কেনা-বেচা হত। তারা দাসদাসীদের খেতে দিত না। পরতে দিত না। একটু
ভুলচুক হলেই মারধর করত। তারা গাছপালা, জীবন-জানোয়ার পাথর আরো কত কিছুর পূজা করত। সেকালের
লোকেরা খোদাকে মানত না। মাটির পুতুলকে খোদা মনে করত। সে সমাজে বিচার-আচার ছিল না। নিয়মকানুন
ছিল না। মরুভূমির আবহাওয়া যেমন গরম তেমনি গরম ছিল তাদের মেজাজ।
এমন যে আরব দেশ, সে দেশে আছে মক্কা নামে এক শহর।
এই মক্কা শহরের খুব নামকরা এক বংশ। নাম তার কোরেশ বংশ। এই বংশে নবী করিম মুস্তাফা
(সা :) মা বিবি আমিনার কোল আলো করে দুনিয়ায় এলেন। সেটা ছিল ৫৭০ সাল। মুস্তাফাকে যে
দেখল সেই তাঁকে আদর করল। চুমু দিল। ভালোবাসল। সোহাগ করল। বুকে জড়িয়ে ধরল। শিশুটি শুধু
একজনের আদর পেলেন না। তিনি হলেন তাঁর বাবা আবদুল্লাহ। মুস্তাফা দুনিয়ায় আসার আগেই তিনি
মারা যান। পাড়া পড়শি নবজাত শিশুকে দেখে বলতে লাগল, এ ছেলে বড় হলে বড়ো কিছু একটা করবেই।
তার যশ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়বে। সে মানুষের দুঃখ দূর করবে।
দিন যায়। রাত আসে। রাত পোহায়। আবার দিন আসে। সময়
বসে থাকে না। বছর ঘুরে আবার নতুন বছর আসে। খেজুর গাছে নতুন খেজুর ফলে। খেজুরের মওসুম
শেষ হয়। এইভাবে বালক মুস্তাফা ছ’বছরে পা দেন। একদিন তাঁর মাও মারা গেলেন। এবারে
তিনি পুরোপুরি এতিম হলেন। আগে বাবাকে হারিয়েছেন। এখন মাও চলে গেলেন। তাঁকে ছেলে বলে
আদর করার আর কেউ দুনিয়ায় রইল না। দাদা আবদুল মোতালিব বেঁচে ছিলেন। তাই লালন-পালনের
ভার পড়ল দাদার ওপরে। দু’বছর পরে মুস্তাফার বয়স যখন আট তখন দাদাও মারা গেলেন।
এইভাবে একে একে সব আপনজন চলে গেলেন। বেঁচে রইলেন শুধু চাচা আবু তালিব। তিনি মুস্তাফার
খাওয়া-পরার ভার নিলেন।
চাচা ছিলেন খুব গরিব মানুষ। তাঁর সংসারে খুব অভাব-অনটন।
নিজের চলাই ভার। সাধ থাকলেও তিনি মুস্তাফাকে আদরে লালন পালন করতে পারলেন না। তিনি তাঁকে
মেষ চরাতে পাঠালেন। রোজ সকালে মুস্তাফা চাচার মেষের পাল নিয়ে মাঠে যান। মাঠে মেষের
পাল চরে বেড়ায়। তিনি চুপচাপ এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকেন। সাঁঝ হলে তাদের নিয়ে বাড়ি ফিরে
আসেন। তাঁর আদরে মেষের দল বলবান হয়ে ওঠে। মাঠে তারা লেজ নেড়ে দৌড়োয়। খেলা করে। কখন
কখন আবার ফিরে আসে মুস্তাফার কাছে। তারা গভীর মমতায় তার গা ঘেঁষে দাঁড়ায়। মুস্তাফা
আদর করে মেষ শিশুর পিঠে হাত বুলান। আবু তালিব এ সব দেখে খুশি হয়ে ওঠেন।
“ ” - MD Polash mia
“ ” - Manir
“ ” - Mahmudul Karim
“ ” - Hadaetul Ahsan