logo
0
item(s)

বিষয় লিস্ট

আহমেদ ফারুক এর শয়তান

চামচিকা টাইপের একটা ভূত নাকি প্রায়ই খাটের চিপায় বসে থাকে। ফিসফিস করে মেয়েলি কণ্ঠে কথা বলে। নুহেল ইদানীং এই ব্যাপার নিয়ে বেশ ব্যস্ত। যে করেই হোক ভূতটাকে বোতলবন্দী করতে হবে। নইলে সামনে ঘোরতর অমঙ্গল। মৃত্যুযোগ আছে বলেও তার ধারণা। তবে মৃত্যুটা কার হবে বা কিভাবে হবে এই বিষয়ে সে নিশ্চিত নয়।

নুহেলের ধারণা সে পাপী মানুষ। ধর্মকর্মের ধারে-কাছে সে নেই। তার পুরো নাম সোলায়মান পাটোয়ারী। নুহেল তার মূল নাম নয়। বলা যায় আগাছা নাম। এই বাড়িতেও সে আগাছা। সম্ভবত এ কারণেই এই বাড়িতে আসার পর ইবু তাকে এই নাম দিয়েছে।

কানার কূটবুদ্ধির অভাব নেই। তবে নুহেল নামের অর্থ কী? তা জানা হয়নি। একদিন ইবুকে অর্থটা জিজ্ঞেস করতে হবে।

পাপী মানুষের মৃত্যু নাকি সহজে হয় না। সে অর্থে ভূত-প্রেত দ্বারা তার মৃত্যুযোগ নেই। তারপরও ভূতটাকে যে করেই হোক খেদাতে হবে। বেটা বদমাশ। চড়িয়ে চাপার দাঁত ভেঙে দেয়া দরকার। গভীর রাতে হঠাৎ ঘুম ভাঙলে দেখা যায় ফিসফিস করে কী যেন বলছে।

একদিন মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। কিন্তু সেদিনই নুহেল নিশ্চিত হলো এটা মেয়েভূত। সম্ভবত পিচকা টাইপের পরী। বজ্জাতের হাড্ডি হবার সম্ভাবনাই বেশি। ভয়টা সেখানেই। কারণ তার চেহারা-সুরত বেশ ভালো। ভালো চেহারার পোলাগো ওপর পরীদের বিশেষ সেক্সুয়াল আকর্ষণ থাকে।

ভূতটা যেহেতু মেয়েলি কণ্ঠে কথা বলে তাই ওটা পেত্নীও হতে পারে। পরী হলে তাও মেনে নেয়া যায়। কিন্তু পেত্নী হলে বিপদ আরো বেশি। এরা মানুষ মারে একটা বিশেষ পদ্ধতিতে। গলার নলী চেপে আলাজিহ্বা টেনে ছিঁড়ে খায়। কী ভয়াবহ!

নুহেল তার নতুন জিন্সের প্যান্ট পরল। তাকে বেশ মানিয়েছে। নিজেকে রাজপুত্র রাজপুত্র মনে হচ্ছে। অবশ্য রাজপুত্ররা মনে হয় জিন্স পরত না। তারা পরত পায়জামা। মেয়েদের মতো ঢোলা পায়জামা। ফাঁক-ফোকর দিয়ে ঠান্ডা বাতাস ঢোকার বিশেষ ব্যবস্থা থাকত। 

নুহেল অবশ্য এ বাড়িতে রাজপুত্রের মতোই আছে। এই বাড়ির সর্বময় কতৃত্ব তার হাতে। এ এক বিশাল স্বাধীনতা। কাশ্মীরিরা জানে স্বাধীনতার কী দাম?

ও ঘর থেকে ইবু চিকন স্বরে ডাকছে- নুহেল, নুহেল।

নুহেলের মনে হলো ইবু ডাকছে না। ডাকছে মেয়ে পেত্নীটা। ও ঘরে যেতেই তার গলা চেপে ধরবে। আলাজিহ্বা টেনে ছিঁড়ে খেয়ে ফেলবে। 

সে নিরস মুখে ইবুর রুমে ঢুকল। বলল, আমি একটু বের হচ্ছি।

কোথায় যাবে?

পুরান ঢাকায়।

সেই ভূত-বাবার কাছে?

হু।

আচ্ছা ভূতটা দেখতে কেমন?

ভূতটাকে তো এখনো দেখিনি। তবে প্রায় রাতেই খাটের নিচে বসে ফিসফিস করে কথা বলে। খিলখিল করে হাসে। মনে হয় বজ্জাত পেত্নী-টেত্নী হবে। আবার পরীও হতে পারে। পরী হলে মুরগির মতো দুটো পাখা থাকবে। পাখা থাকলে ভূতদের পরী বলে।

ও।

ইবু আর কথা বাড়াল না। নুহেলের প্যান্টটা একটু বড় হয়েছে। কোমর ঢিলেঢালা হয়ে আছে। ঝট করে খুলে যাবে না তো? তাহলে মহাকেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।

চা দিতে বলব?

না, থাক। চা লাগবে না। শরীর ভালো লাগছে না। আমি একটু ঘুমাব।

এই অসময়ে ঘুম? মাত্র সকাল ন’টা বাজে।

আমার কাছে দিনও যা রাতও তা। তাই না?

নুহেল ইবুর কথার উত্তর দিলো না। সত্যিটাই সে বলেছে। কারণ সে জন্মান্ধ। যে জন্মের পর থেকে এই পৃথিবীর কোনো কিছুই দেখেনি, মানুষ কেমন? গাছপালা কেমন? দিন-রাত কেমন? এমনকি লাল-কালো-সাদা কিছুই সে দেখে না। বোঝেও না। সে সব জানে কিন্তু কোনটা কেমন দেখতে? দেখা বলতে কী বোঝায় এটাই সে জানে না। তার কাছে এ পৃথিবীর সব কিছুই সৃষ্টিকর্তার ধারণার মতো। আমরা সৃষ্টিকর্তা কী তা বুঝি, জানি। কিন্তু কখনো দেখিনি। সৃষ্টিকর্তা আসলে কেমন আমরা জানি না।

ইবু ইজি চেয়ারে দুলছে। ঘুমানোর চেষ্টা করছে। নুহেল বের হয়ে এলো। ভূত-বাবার কাছে তাড়াতাড়ি যেতে হবে। পেত্নীটার জলদি একটা সুরাহা করা দরকার। কিন্তু ভূত-বাবা তো ভূত ধরতে পারে শুনেছে। পেত্নী ধরতে পারবে কি না কে জানে।

বাড়ির সামনে এসে নুহেল বাড়িটার দিকে তাকাল। বিশাল বাড়ি। ঢাকা শহরের বাড়ি না হয়ে অন্য কোথাও হলে এত দিনে বাড়িটা শেওড়ায় ঢেকে যেত। লোকে বলত ভূতবাড়ি। কিন্তু এই বাড়িটা একেবারে আধুনিক। ইবুর দাদা ইমনুল দারোগা বেশ ঘটা করে বাড়িটা বানিয়েছিলেন। পরে ঘটনাক্রমে বাড়িটা ইবুর বাবার হস্তগত হয়। সে এক বিশাল ইতিহাস। 

সংশ্লিষ্ট বই

পাঠকের মতামত
  • Rating Star

    “Kuchu bolar nei je eta koto valo ” - Begula Pigu

  • Rating Star

    “Durdanto ” - Aparajita Dey

  • Rating Star

    “ ” - Robi User

  • Rating Star

    “ ” - Niaz Zaman

রিভিউ লিখুন
রিভিউ অথবা রেটিং করার জন্য লগইন করুন!