অধ্যায় এক
ব্যর্থ হয়ে থাকে যদি প্রণয়ের
এতো আয়োজন,
আগামী মিছিলে এসো
স্লোগানে স্লোগানে হবে
কথোপকথন।
আকালের এই কালে সাধ হলে পথে
ভালবেসো,
ধ্রুপদী পিপাসা নিয়ে আসো যদি
লাল শাড়িটা তোমার পরে এসো।
...হেলাল হাফিজ
কলকাতার হাওড়া থেকে ট্রেন ছেড়েছে রাত ১২টায়। যাচ্ছি
দক্ষিণের দিকে। এখন মাঝরাত। কামরার প্রায় সব যাত্রীই ঘুমিয়ে। আমি দৃশ্যশিকারি,
জেগে আছি একমাত্র। রাত্রির শূন্যতা, শব্দের নীরবতা, ঝিকঝিক কু উ উ... ভালো লাগছে।
উড়িষ্যা দিয়ে যাচ্ছে ট্রেন। বাংলার স্বাধীন নবাব,
আমাদের শেষ স্বাধীন নবাব, সিরাজউদ্দৌলার রাজত্বের অন্তর্ভুক্ত ভূখণ্ড। ভূগোল,
রাজনীতি, রাষ্ট্র সময়ের সাথে সাথে কত পরিবর্তনশীল। একসময় উড়িষ্যা মানে
বাংলা-বিহার-উড়িষ্যা মিলে একটি দেশ। আজ সেই ভূখণ্ড ভারতের অন্তর্গত অন্য দেশ।
ভুবনেশ্বর তার রাজধানী।
সম্রাট আকবরের আমলে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার প্রাদেশিক
রাজধানী ছিল বিহারের রাজমহল। এরপর সম্রাট জাহাঙ্গীরের শাসনামলে ১৬০৮ সালে ইসলাম
খান চিশতীকে রাজমহলের সুবেদার নিযুক্ত করেন। তিনি ১৬১০ সালে বাংলার ভৌগোলিক
অবস্থান বিবেচনা করে রাজধানী রাজমহল থেকে সরিয়ে ঢাকায় স্থানান্তর করেন। ১৭১৭ সালে
সুবেদার মুর্শিদকুলি খান রাজধানী মুর্শিদাবাদে স্থানান্তর করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের
পর সেই ঢাকা আবার পূর্ববঙ্গ ও আসামের রাজধানী হয়। আসামের নবীন কিশোর তা কি জানে?
কেউ কেউ এখনো তা জানলেও কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাবে সেই সব স্মৃতি...
নবাব সিরাজউদ্দৌলা বাংলার নবাব আলীবর্দী খানের নাতি।
আলীবর্দী খানের কোনো পুত্র ছিল না। তার ছিল তিন কন্যা। তিন কন্যাকেই তিনি নিজের বড়
ভাই হাজী আহমদের তিন পুত্রের সাথে বিয়ে দেন। এর মধ্যে নওয়াজেশ মোহাম্মদের সাথে বড়
মেয়ে ঘসেটি বেগমের, সাইয়েদ আহম্মদের সাথে মেজো মেয়ে এবং জয়েনউদ্দিন আহম্মদের সাথে
ছোট মেয়ে আমেনা বেগমের বিয়ে হয়। আমেনা বেগমের দুই পুত্র ও এক কন্যা ছিল। পুত্ররা
হলেন মির্জা মোহাম্মদ (সিরাজউদ্দৌলা) এবং মির্জা মেহেদী। আলীবর্দী খান যখন পাটনার
শাসনভার লাভ করেন, তখন তার তৃতীয় কন্যা আমেনা বেগমের গর্ভে মির্জা মোহাম্মদ
(সিরাজউদ্দৌলা)-এর জন্ম হয়। এ কারণে তিনি সিরাজের জন্মকে সৌভাগ্যের লক্ষণ হিসেবে
বিবেচনা করে আনন্দের আতিশয্যে নবজাতককে পোষ্যপুত্র হিসেবে গ্রহণ করেন। সিরাজ তার
নানার কাছে ছিলেন খুবই আদরের, যেহেতু তার কোনো পুত্র ছিল না।
১৭৪৬ সালে আলীবর্দী খান মারাঠাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে গেলে
কিশোর সিরাজ তার সঙ্গে যান। আলীবর্দী সিরাজউদ্দৌলাকে বালক বয়সেই পাটনার শাসনকর্তা
নিযুক্ত করেছিলেন। তার বয়স অল্প ছিল বলে রাজা জানকিরামকে পাটনার রাজপ্রতিনিধি
নিযুক্ত করা হয়। কিন্তু বিষয়টি সিরাজউদ্দৌলাকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। তাই তিনি
একদিন গোপনে কয়েকজন বিশ্বস্ত অনুচরকে নিয়ে ভ্রমণের নাম করে স্ত্রী লুৎফুন্নেসাকে
সঙ্গে নিয়ে মুর্শিদাবাদ থেকে বের হয়ে পড়েন। তিনি সোজা পাটনা গিয়ে উপস্থিত হন এবং
জানকিরামকে তার শাসনভার ছেড়ে দেয়ার আদেশ দেন। কিন্তু নবাবের বিনা অনুমতিতে
জানকিরাম তার শাসনভার ছেড়ে দিতে অস্বীকৃতি জানান। দুর্গের দ্বার বন্ধ করে বৃদ্ধ
নবাবের কাছে বিস্তারিত তথ্য জানিয়ে দূত পাঠান। অন্যদিকে জানকিরামের আচরণে ভীষণ
ক্ষুব্ধ হয়ে সিরাজউদ্দৌলা দুর্গ আক্রমণ করেন। উভয়পক্ষে লড়াই শুরু হয়ে গেলে হতাহতের
ঘটনাও ঘটে। ঘটনার সংবাদ পেয়ে আলীবর্দী খান দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছেন এবং
পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন। সেদিনই আলীবর্দী খান দুর্গের অভ্যন্তরস্থ দরবারে
স্নেহভাজন দৌহিত্রকে পাশে বসিয়ে ঘোষণা দেন—‘আমার পরে সিরাজউদ্দৌলাই
বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার মসনদে আরোহণ করবে।’
ইতিহাসে এই ঘটনাকে সিরাজউদ্দৌলার যৌবরাজ্যাভিষেক বলে
অভিহিত করা হয়েছে। এই সময়ে সিরাজউদ্দৌলার বয়স ছিল মাত্র সতেরো বছর।
“রাঙ্গামাটি ” - Himanish Barua
“ ” - MD. Nazmul Hossain
“ ” - ahmod ullah
“ ” - jack the rippar