এক
‘আর মাত্র একটা গুলি
বাকি,’ বিড়বিড় করে বলল মুসা। বন্দুকের মাছিতে স্থির হলো দৃষ্টি। আস্তে করে ট্রিগার
টিপল। টিপেই বুঝল মিস করেছে।
‘তোমার পালা শেষ,’
পেছন থেকে হেসে উঠল ওর বন্ধু কিশোর।
ফিরে তাকাল মুসা।
রোদে পোড়া মুখে কিশোরের সাদা দাঁতগুলো যেন ফুটে উঠেছে। হাসতে হাসতেই কিশোর বলল,
‘ওটা তোমার শেষ ক্লে পিজিয়ন। আমিই জিতলাম।’
মুসার লম্বা সোনালি
চুল উড়ছে সাগর থেকে আসা ভোরের বাতাসে। পিঠ চাপড়ে দিয়ে কিশোর বলল, ‘নিশানা আজ
সুবিধে হয়নি তোমার।’
শ্রাগ করল মুসা।
‘কাল হয়েছিল। ফন রাইখকে যখন শুট করেছিলাম।’
‘সে তো ক্যামেরায়।
ক্যামেরা আর রাইফেল শুটিংয়ের মাঝে বিস্তর ফারাক।’
নীরবে সে কথা
স্বীকার করে নিয়ে রাইফেলের ম্যাগাজিন থেকে বুলেটের খোসাটা খুলে ফেলল মুসা।
‘আমাদের এবারের
কেসটা সহজ, কী বলিস?’ মুসার মুখে হাসি ফোটানোর জন্য বলল কিশোর। ‘সৈকতে শুয়ে-বসে
রোদ খাওয়া, আর নজর রাখা, ব্যস।’
আয়ল্যান্ড অভ
বারমুডার ছোট্ট একটা গ্রাম, সমারসেট ভিলেজে এসেছে কিশোর আর মুসা। রাশেদ পাশার একটা
তদন্তের কাজে সাহায্য করছে ওরা। কিছুদিন ধরে রয়েছে তার এক অতীত সহকর্মীর বাড়িতে।
নাম আরনি ভিনসেনজো। তার একটা মেয়ে আছে, আইলিন।
ভিনসেনজোর চেয়ে আরনি
ডাকটা শুনতেই বেশি পছন্দ করেন তিনি। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডেও কাজ করেছেন কিছুদিন।
রাশেদ পাশাকে কয়েকটা জটিল কেসে সহায়তা করেছেন তখন। বন্ধুর ছেলেদের খুশি হয়েই জায়গা
দিয়েছেন বাড়িতে। আর শুধু জায়গা দেয়াই নয়, অবসর সময়ে শুটিংও শেখাচ্ছেন দুই
গোয়েন্দাকে। গুলি করতে জানে না ওরা তা নয়, কিন্তু আরনির মতো আগ্নেয়াস্ত্র বিশেষজ্ঞ
আর শুটারের কাছে নিজেদের একেবারে আনাড়ি মনে হচ্ছে। নতুন নতুন টেকনিক শিখছে ওরা।
মাঝে মাঝে ওদের রীতিমতো চমকে দেন আরনি।
‘আরেক রাউন্ড চালালে
কেমন হয়?’ প্রস্তাব করল মুসা।
ঘড়ি দেখল কিশোর।
‘তার চেয়ে বরং ফন রাইখের ভিলায় যাওয়া উচিত।’
‘কেন? কিছুই তো
পাইনি এখনও। রাইখ আর তার বাড়ির কয়েকটা ছবি ছাড়া। আমাদের সংবাদদাতার খবর সত্যি হলে
দুদিনের মধ্যেই কিছু জাল ক্রেডিট কার্ড এখান থেকে আমেরিকায় চালান হবে। ওটা নতুন
কোনো খবর নয়, রাশেদ আঙ্কেলকে বলার মতো কিছু না।’
ঘন চুলে আঙুল চালাল
কিশোর। ‘তাহলে কি আরও কিছু মাটির কবুতর ধ্বংস করতে বলছ?’
‘খুব খুশি হই।
তোমাকে অন্তত একবার হলেও হারাতে চাই।’
শরীর টানটান করে
দাঁড়াল কিশোর।
‘বেশ, তবে রাইফেল
নয়,’ কিশোর বলল। ‘এবার শটগান।’
সুন্দর করে ছাঁটা
লনের ওপাশে ট্র্যাপ হাউসের দিকে ফিরে হাত নাড়ল মুসা। ভেতরে রয়েছে আরনি, যন্ত্রের
সাহায্যে আকাশে ছুড়ে দিয়েছেন ক্লে পিজিয়ন।
সহজ ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে
আছে মুসা, হাতে শটগান। কিন্তু কিশোর জানে, বাইরে শান্ত মনে হলেও ভেতরে ভেতরে ভীষণ
উত্তেজিত হয়ে আছে মুসা। অ্যাকশন খুব পছন্দ মুসার, গত কদিনে সেটা খুব অল্পই পেয়েছে।
বন্দুকে গুলি ভরতে
ভরতে কিশোর জিজ্ঞেস করল, ‘আমি একটা তুমি একটা, এভাবে করবে?’
মুসা মাথা ঝাঁকাল।
কিশোর বলল, ‘কাজটা
কিন্তু আমাদের সহজ, বুঝলে? সিডারগাছের নিচে পাথরে বসে সাগরের ধারের বাড়ির ছবি
তোলা...’
কিশোরের কথায় বাধা
দিয়ে ট্র্যাপ হাউসের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বলল মুসা, ‘ছাড়ুন!’
আকাশে উড়াল দিল একটা
খেলনা পায়রা। মসৃণ ভঙ্গিতে কাঁধে বন্দুক ঠেকিয়ে নিশানা করল মুসা। গর্জে উঠল
বন্দুক। শত টুকরো হয়ে গেল পায়রাটা।
‘তিনবারে পনেরো
হাজার ক্রেডিট কার্ড চালান হয়ে গেছে এখান থেকে,’ বিড়বিড় করে নিজেকেই যেন বলল
কিশোর। ‘আর আমরা জানলাম নিতান্ত কাকতালীয়ভাবেই...’
‘কী বললে?’
‘না, ভাবছি। ওই যে,
যে লোকটা ধরা পড়ল, উগরে দিল সবকিছু...’
‘হ্যাঁ। ব্যাটা আস্ত
চোর। কে জানত, ওই শয়তানটা রাইখের দূত। ও ব্যাটা ধরা না পড়লে কিছুই জানতে পারতাম না
আমরা,’ বলেই আরনির উদ্দেশে চেঁচিয়ে উঠল, ‘ছাড়ুন!’
কিশোরের পালা এবার।
চমকে গিয়ে তাড়াতাড়ি বন্দুক ঠেকাল কাঁধে। অন্যমনস্ক ছিল, স্বভাবতই মিস করল। তাতে
কিছুই মনে করল না সে। মুসার দিকে ফিরে বলল, ‘লোকটা সত্যি কথাই বলেছে, কী মনে হয়
তোমার?’
‘কী জানি,
প্রমাণ-টমান তো নেই। চুরি করা প্লেট থেকে তৈরি কিছু কার্ডসহ ধরা পড়েছে। রাইখের নাম
বলেছে। রাইখ যে এতে জড়িত, প্রমাণ নেই। কে বিশ্বাস করবে ও রকম হাওয়াই কথা?’ আরনির
উদ্দেশে চিৎকার করে বলল মুসা, ‘ছাড়ুন!’
“ ” - Biddut Barmon
“ ” - Kalyan Paul
“তেমন একটা সুবিধার না অন্যগুলার তুলনায় তাই ৪স্টার ” - namnai
“ ” - Robi User