logo
0
item(s)

বিষয় লিস্ট

মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান এর বাংলা গান রচনা কৌশল ও শুদ্ধতা

পূর্বকথা

 

 “উঞ্চা উঞ্চা পাবত তহি বসই সবরী বালী।

 মোরঙ্গী পীচ্ছ পরহিণ সবরী গিবত গুঞ্জরী মালী ।।

 উমত সবরো পাগল সবরো মা কর গুলী গুহাড়া তোহোরি।

 নিঅ ঘরিণী নামে সহজ সুন্দরী ।।

 নানা তরুবর মৌলিল রে গঅনত লাগেলী ডালী ।।”

 

কবি শবরী পাদ লিখেছেন এই গান। হ্যাঁ এটি, শুধু এটি নয়, বাংলা ভাষার এযাবৎ আবিষ্কৃত সর্বপ্রাচীন যে লিখিতরূপ চর্যাপদ, তার সবগুলিই গান। তাই স্পষ্ট করেই বলা যায়, বাংলা গানের যেদিন জন্ম, বাংলাসাহিত্যের জন্মও সেদিন। কথাটা যেভাবে বললে আরো নির্দিষ্ট করা যায় তা হলো, বাংলা গানের ভেতর দিয়েই বাংলা কবিতা বা সাহিত্যের জন্ম। কারণ চর্যাপদগুলো মূলত বৌদ্ধগান ও দোহা। এগুলো যাঁরা রচনা করেছিলেন তাঁরা সবাই ছিলেন সংগীতজ্ঞ কবি। তাঁরা যা রচনা করে গেছেন, তা গানের কবিতা। এর প্রায় সবগুলিতেই রাগ ও তালের উল্লেখ আছে। প্রাচীনকালের সেই ঊষালগ্ন থেকে মধ্যযুগের গীতিকবিতা ও কাহিনীকাব্য পর্যন্ত যা কিছু রচিত হয়েছে, তা সবই সুর সহযোগে গাওয়ার জন্যেই, অর্থাৎ এগুলো গানের কবিতা।

সপ্তম-অষ্টম শতকে জন্ম নেবার পর থেকে উনিশ শতকের প্রথমাংশ পর্যন্ত, হাজার বছর ধরে রচিত বাংলা সাহিত্যের সবকিছুই কবিতা। আরো নির্দিষ্ট করে বলা যায় গানের কবিতা। ঊনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে, মাইকেল মধুসূদন দত্ত প্রথম কবি, যিনি গাওয়ার জন্যে নয়, পাঠের জন্যে কবিতা রচনা করেন। অবশ্য গান হিসেবেও তিনি কিছু কবিতা রচনা করে গেছেন। বস্তুত এ সময় থেকেই গানের কবিতা ও পাঠের কবিতা পৃথক হয়ে যায়। এর ঠিক পূর্ব পর্যন্ত, অর্থাৎ চর্যাপদ থেকে শ্রীকৃষ্ণকীর্তন, মঙ্গল কাব্যসমূহ, বৈষ্ণব পদাবলী, কবিওয়ালাদের চাপান-উতোর, তর্জা, পাঁচালি, খেউড়, ঢপ, টপ্পা, কীর্তন ইত্যাদি সবই ছিলো গান। বড়ু চণ্ডীদাস, চণ্ডীদাস, বিদ্যাপতি, গোবিন্দদাস, জ্ঞানদাস, কৃত্তিবাস, কাশীরাম দাস, মালাধর বসু (শেষোক্ত তিনজনই অনুবাদক কবি); হরিদত্ত, নারায়ণ দেব, মুকুন্দরাম চক্রবর্তী, রায়গুনাকর ভারত চন্দ্র, ময়ুরভট্ট প্রমুখ মঙ্গল কাব্যের কবি; শাহ মুহাম্মদ সগীর, বাহরাম খান, মুহম্মদ কবীর, সাবিরিদ খান, সৈয়দ সুলতান, আব্দুল হাকিম, কাজী দৌলত, আলাওল প্রমুখ ছোট-বড় মুসলিম কবি: গোঁজলা গুই, রামবসু, এন্টনি ফিরিঙ্গি, হরু ঠাকুর, রামনিধি গুপ্ত (নিধুবাবু) প্রমুখ কবিওয়ালা এবং টপ্পা সম্রাটদের সমস্ত রচনাই গাওয়ার জন্যে। কিছু কিছু উদাহরণ দিচ্ছি

  “কেনা বাঁশী বাএ বড়ায়ি কালিনী নই কুলে।

 কেনা বাঁশী বাএ বড়ায়ি এ গোঠ গোকুলে ।।

 আকুল শরীর মোর বেআকুল মন।

 বাঁশীর শবদে মো আউলাইলো রান্ধন ।।”

 ─ বড়ু চণ্ডীদাস : শ্রীকৃষ্ণকীর্তন

 “শুন ভাই সভাজন কবিত্বের বিবরণ এই গীত হইলো যেন মতে।

 উড়িয়া মায়ের বেশে কবির শিয়র দেশে চণ্ডিকা বসিল আচম্বিতে ।।”

মুকুন্দরাম চক্রবর্তী : চণ্ডীমঙ্গল

 

 “কে বলে শারদ শশী সে মুখে তুলা।

 পদ-নখে পড়ি তার আছে কতগুলা ।।”

            রায়গুনাকর ভারত চন্দ্র : অন্নদা মঙ্গলকাব্য

 

 “এ ঘোর রজনী মেঘের ঘটা

 কেমনে আইল বাটে।

 আঙ্গিনার কোণে বন্ধুয়া তিতিছে

 দেখিয়া পরান ফাটে ।।”

চণ্ডীদাস : বৈষ্ণব পদাবলী

 

 “নব অনুরাগিনী রাধা।

 কছু নাহি মানয়ে বাধা ।।

 একলি কয়লি পয়ান।

সংশ্লিষ্ট বই

পাঠকের মতামত
  • Rating Star

    “ ” - Sneha Dawan

রিভিউ লিখুন
রিভিউ অথবা রেটিং করার জন্য লগইন করুন!