মহাকাশে কী
ঘটছে
১৬০৯ সালে ইতালিতে গ্যালিলিও গ্যালিলেই প্রথম দূরবীনের ভেতর
দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আশ্চর্য সব জিনিস দেখেছেন; তখন মহাকাশের রহস্য সন্ধানে এক
নতুন যুগের সূচনা হয়েছিল। এমনি আরেক নতুন যুগের সূচনা হয় যখন ১৯৫৭ সালের ৪ অক্টোবর
প্রথম স্পুৎনিক আকাশে ওড়ে। মানুষের পাঠানো সেই প্রথম নভোযানটি ছিল অতি ছোট; কিন্তু
দেখতে দেখতে তার আকার বাড়তে থাকে। ১৯৬১ সালের ১২ এপ্রিল ইউরি গাগারিন নামে এক দুঃসাহসী
তরুণ বৈমানিক রকেট যানে চেপে পৃথিবীর চারপাশে ঘুরপাক খেয়ে আসে।
তারপর থেকে শুধু পৃথিবীর চারপাশে
নয়, সৌরজগতের দিকে দিকে নভোযানের সাহায্যে মানুষের অভিযাত্রা এগিয়ে চলেছে। ১৯৬৯ সালে
মানুষ গিয়ে পৌঁছেছে চাঁদে; সেখানে বসানো হয়েছে মহাকাশ সম্বন্ধে খবরাখবর নেবার নানা
বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি। নভোযানে চেপে মানুষ মাসের পর মাস─ এমনকি এক বছরের বেশি সময়─ কাটিয়েছে মহাকাশে; সেখানে অসংখ্য
পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে। নভোযানে সে নানা বিশেষ ধরনের পরীক্ষার যন্ত্রপাতি বসিয়ে রেখেছে
আকাশের অনেক উঁচুতে। সেসব থেকে অনবরত নানা তথ্য এসে পৌঁছচ্ছে পৃথিবীতে বিজ্ঞানীদের
কাছে।
মহাকাশ গবেষণায় একটি উল্লেখযোগ্য
ধাপ হল সত্তর আর আশির দশকে ভয়েজার নভোযানের অভিযান। ১৯৭৭ সালের আগস্ট-সেপ্টেম্বরে ‘ভয়েজার’ বা অভিযাত্রী নামে যে দুটি নভোযান
বৃহস্পতি গ্রহের দিকে পাঠানো হয় সেগুলো ১৯৮০-৮১-তে শনি, ১৯৮৬-তে ইউরেনাস আর ১৯৮৯ সালে
নেপচুন গ্রহের পাশ দিয়ে যায়। তারপর প্লুটোর কক্ষপথ পেরিয়ে পাড়ি জমায় সৌরজগতের আরো অতি
দূর প্রান্তে। এসব নভোযান থেকে বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস আর নেপচুনের আশ্চর্য স্পষ্ট
ছবি পাওয়া গিয়েছে; অনেকগুলো নতুন উপগ্রহের খোঁজ মিলেছে; জানা গেছে আরো বহু আশ্চর্য,
অজানা তথ্য। এমনি নানা পদ্ধতিতে মহাকাশের তথ্য সংগ্রহ করে বিজ্ঞানীরা জানতে চাইছেন
কিভাবে এই সৌরজগতের উৎপত্তি হল; কী হবে এর পরিণতি। এই মহাবিশ্বের উৎপত্তি আর পরিণতি
সম্বন্ধেও জানতে চাইছেন তাঁরা। আর এসব অনুসন্ধানের জন্য উদ্ভাবন করছেন নানা নতুন নতুন
যন্ত্রপাতি।
আরো শক্তিশালী
দূরবীন
গ্যালিলিও
যে দূরবীনের সাহায্যে চাঁদের গায়ের এবড়ো-খেবড়ো খাদ দেখেছিলেন তার ‘চোখ’ চওড়ায় ছিল মাত্রই ২.৫ সেমি (এক
ইঞ্চি)। এই শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে শুরু করে কিছুদিন আগ পর্যন্তও পৃথিবীর সবচেয়ে বড়
চালু দূরবীন ছিল ক্যালিফোর্নিয়ার মাউন্ট পালোমার-এ; তার নাম হেল (Hale) দূরবীন। এর প্রতিফলক ৫ মিটার
(২০০ ইঞ্চি) চওড়া (সত্তরের দশকে সাবেক সোভিয়েতের জেলেনচুকস্কায়ায় ৬ মিটার বা ২৩৬ ইঞ্চি
মাপের একটি দূরবীন চালু হয়েছিল কিন্তু সেটি তেমন ভাল কাজ করেনি)। ১৯৯৩ সালে হাওয়াইয়ের
মাউনা কিয়া (Mauna Kea) পর্বতের
৪,২০০ মিটার উঁচুতে বসানো হয়েছে কেক (Keek) দূরবীন; এর প্রতিফলক আয়না সমাবেশ
১০ মিটার (৩৮৭ ইঞ্চি) চওড়া। অর্থাৎ এতে আগের সব দূরবীনের চেয়ে নক্ষত্রের অনেক বেশি
পরিমাণ আলো ধরা যায়। তাই এটি দিয়ে আগের চেয়ে অনেক বেশি নক্ষত্রের হদিস করা যাচ্ছে।
নক্ষত্রজগতের খবরাখবর সংগ্রহের
জন্য গত ক’বছরে অনেক
নতুন ধরনের পরিমাপের যন্ত্রপাতি মহাকাশে বসানো হয়েছে। তার মধ্যে ১৯৯০ সালে স্থাপন করা
হয়েছে হাবল নামে মহাকাশ দূরবীন। হাবল দূরবীনের প্রতিফলকের মাপ পৃথিবীর ওপরকার বিশাল
দূরবীনগুলোর তুলনায় ছোট─ মাত্র ২৪
মিটার (৯৫ ইঞ্চি)। কিন্তু এটি পৃথিবীর ৬০০ কিলোমিটার ওপর দিয়ে যে কক্ষপথে ঘোরে সেখানে
বাতাস নেই বললেই চলে। তাই হাবল-এ পৌঁছায় নক্ষত্রলোকের অবিকৃত বিকিরণ। এই দূরবীন তৈরির
কিছুটা ত্রুটির জন্য এটি পুরো শক্তিতে কাজ করছিল না। ১৯৯৩ সালের ডিসেম্বর মাসে একদল
নভশ্চর শাটল যানে করে এক দুঃসাহসিক অভিযানে মহাকাশে গিয়ে এর প্রতিফলক আয়না সমাবেশ মেরামত
করে এসেছেন। পৃথিবীর ওপরকার সবচেয়ে ভাল দূরবীনের চেয়ে হাবল-এর ছবি দশগুণ বেশি স্পষ্ট;
তাই এসব অতিসূক্ষ্ম ছবি মহাকাশের আরো গভীর রহস্য উদ্ঘাটনে সহায়তা করছে।
মহাকাশে বসানো এসব দূরবীনের সঙ্গে
আজ যোগ হয়েছে পৃথিবীর ওপর বসানো নানা ধরনের বেতার দূরবীন। পৃথিবীতে প্রথম বড় আকারের
বেতার দূরবীন বসানো হয় বিলেতের ম্যাঞ্চেস্টারের কাছে জডরেল ব্যাঙ্ক-এ ১৯৫৭ সালে; এর
ডিশের ব্যাস ৭৬ মিটার (২৫০ ফুট); কিন্তু এটাকে এদিক-ওদিক ঘোরানো যেত না। পুরোপুরি ঘোরানো
যায় এমন বড় বেতার দূরবীন বসানো হয় জার্মানির ইফেলসবার্গ-এ ১৯৭১ সালে; এই দূরবীনের ব্যাস
১০০ মিটার (৩২৮ ফুট)। তবে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বেতার দূরবীনের ডিস ৩০৫ মিটার (১০০০ ফুট);
এটা বসানো আছে পোর্টো রিকোর আরেসিবোতে একটি পাহাড়ের উপত্যকায়।
বেতার দূরবীনের ক্ষমতা বাড়াবার
একটা উপায় হল কয়েকটা ডিশে ধরা সংকেতকে এমনভাবে একসঙ্গে জুড়ে দেয়া যেন একটা খুব বড় ডিশের
মতো ফলাফল পাওয়া যায়। এ জাতের এক ধরনের বেতার দূরবীনের নাম হল Very Large Array (VLA) বা অতি
বিশাল-বিন্যাস দূরবীন। এতে অনেকগুলা ডিস-অ্যান্টেনার মতো বেতার গ্রাহক একযোগে সাজানো
থাকে ইংরেজি Y অক্ষরের
আকারে; এগুলো অতিদূর নক্ষত্র থেকে আসা বেতার তরঙ্গকে কেন্দ্রীভূত করতে পারে। নিউ মেক্সিকোতে
এমনি এক বেতার দূরবীন আছে─ তাতে ২৫
মিটার (৮২ ফুট) ব্যাসের ২৭টা ডিশ একসঙ্গে করা হয়েছে Y অক্ষরের মতো; তাতে যে ছবি পাওয়া
যায় তা একটি ডিশ থেকে পেতে হলে ২৭ কিলোমিটার (১৭ মাইল) চওড়া ডিশের দরকার হত। আরেক রকম
বেতার দূরবীনের নাম হল Very Long
Baseline Interferometer (VLBI)। এতে পৃথিবীর নানা অংশে বসানো বেতার দূরবীনের
তথ্যকে কম্পিউটারের সাহায্যে সমন্বিত করা হয় আর তার ফলে দূরবীনের বেতার-চোখ চওড়া হয়ে
দাঁড়ায় পৃথিবীর ব্যাসের সমান অর্থাৎ প্রায় ১৩,০০০ কিলোমিটার। এই ব্যবস্থায় একটি চুলের
ব্যাস মাপা যেতে পারে আশি কিলোমিটার দূর থেকে।
“সম্ভবত ছাপায় ভুল। ছবি ঠিকমত আসে না। ” - abid sikder
“অসাধারণ একটা বই! মহাকাশ নিয়ে এক মলাটে অনেক কিছু জানা শুরু করার জন্য যথেষ্ট। ” - JS Bangladesh