logo
0
item(s)

বিষয় লিস্ট

দেবব্রত মুখোপাধ্যায় এর সাকিব আল হাসান: আপন চোখে, ভিন্ন চোখে

সাকিব আল হাসান: আপন চোখে, ভিন্ন চোখে
এক নজরে

মোট পাতা: 341

বিষয়: খেলাধুলা

মুখবন্ধ নয়; মুখ খোলা

হাবিবুল বাশার

 

২০০৬ সালের কথা।

পরের বছর বিশ্বকাপকে সামনে রেখে দারুণ প্রস্তুতি নিচ্ছি তখন আমরা। প্রস্তুতি মানে, মূলত দেশে ও বিদেশে একটার পর একটা সিরিজ খেলছি। সেই সময়ে জিম্বাবুয়ে সফরে আমাদের সঙ্গে একটা নতুন ছেলেকে দিয়ে দেওয়া হলো- ব্যাটিং অলরাউন্ডার; বাঁহাতি স্পিন করে।

ছেলেটা দেখতে খুবই হ্যাংলা-পাতলা, আগে সেভাবে কখনো পরিচয় হয়নি, খেলাও দেখিনি। ফলে প্রথম দলে পেয়ে খুব একটা মুগ্ধ হয়ে গেছি, বলা যাবে না। বরং দলে তখন রফিক ছিল, রাজ্জাক ছিল; ওদের ভিড়ে আরেকটা বাঁহাতি স্পিনারকে সেভাবে খুব খেয়াল করে দেখিওনি।

তার পরও যেহেতু বলা হচ্ছিল, ছেলেটার ভবিষ্যৎ ভালো; তাই ওকে একটা ম্যাচ খেলানোর ইচ্ছে ছিল। কিন্তু জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একটা অনুশীলন ম্যাচে ওর বোলিং দেখে সে ইচ্ছেটাও নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।

জিম্বাবুইয়ানরা স্পিন একদমই ভালো খেলে না, বাঁহাতি স্পিন তো বুঝতেই পারে না। সেখানে প্রায় সবাই ভালো খেলছে! এরপর আর ছেলেটাকে মাঠে নামানোর ইচ্ছে থাকে?

ইচ্ছে ছিল না। তার পরও সিরিজের শেষ ম্যাচে মুশফিককে প্রথম ম্যাচ খেলানো হলো; সঙ্গে আমরা ওই ছেলেটাকেও একটা চান্স দিলাম- সিরিজ তো হেরেই গেছি, খেলুক না হয় একটা ম্যাচ।

আমার জীবনে সবচেয়ে বড় বিস্ময়টা ওই ছেলেটা উপহার দিয়েছিল সেদিন।

অনুশীলন ম্যাচে কাকে দেখেছিলাম, আর আজ কাকে দেখছি! ব্যাট হাতে দলের ম্যাচ বের করে আনা ৩০ রানের একটা ইনিংস খেললে বটে। কিন্তু আমি মুগ্ধ হলাম বোলিং দেখে- অবিশ্বাস্য।

সেই অনুশীলন ম্যাচের প্রতিটা ভুল সে মাথায় রেখেছে। সেদিন যা যা করেছিল, তা কিচ্ছু করল না। একেবারে নতুন করে যেন নিজেকে চেনাল। সেদিনই একটা কথা বুঝেছিলাম- এই ছেলে এক ভুল দুবার করে না।

হ্যাঁ, আমার কাছে সাকিব আল হাসানের পরিচয় এটাই- এক ভুল দুবার না করা।

সাকিব কত বড় ক্রিকেটার; সেটা নিশ্চয়ই আমাকে বুঝিয়ে বলতে হবে না। আইসিসির র‌্যাংকিং, নানা ধরনের রেকর্ড ইতোমধ্যে সাকিবকে বাংলাদেশের এবং বিশ্বের বিবেচনায় একটা অবস্থানে নিয়ে গেছে। অনেক গ্রেটের সঙ্গে তার নাম উচ্চারিত হচ্ছে। ফলে সাকিবের মূল্যায়ন ঠিক আমি করতে বসিনি।

ব্যক্তিগতভাবে আমার জীবনের যে কয়টা বড় গর্বের ব্যাপার, তার মধ্যে একটা হলো বর্তমান জাতীয় দলের একঝাঁক তারকার প্রথম আন্তর্জাতিক অধিনায়ক হতে পারা। নিঃসন্দেহে সেই তালিকায় সাকিব আমাকে সবচেয়ে বেশি গর্বিত করে থাকে। তার অধিনায়ক ছিলাম, এটা নিশ্চয়ই আমার জন্য প্রাপ্তির ব্যাপার।

আমি খেলা ছাড়ার পরও নানা ভূমিকায় এ ছেলেটিকে কাছ থেকে দেখেছি। ওর অধিনায়ক থাকা অবস্থায় জাতীয় দলের ম্যানেজার হিসেবে ছিলাম দলের সঙ্গে। এখন নির্বাচক হিসেবে দেখছি। সব দেখা থেকে একটা বাক্যই বলতে পারি- সাকিবের মতো ক্রিকেটপ্রতিভা রোজ রোজ আপনি দেখতে পাবেন না।

সাকিব সম্পর্কে আমাকে প্রথম ধারণাটা দিয়েছিলেন ফারুক ভাই (বর্তমান ও তখনকার প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ)। এর আগে তখনকার বিসিবি অফিসে কোনো একটা অফিশিয়াল কাজে গিয়ে ওকে প্রথম দেখি। ওরা বোধহয় বয়সভিত্তিক দলের কিছু কাজে বিসিবি অফিসে এসেছিল। এক পাশে দেখি মেহরাব জুনিয়র, সাকিব এবং আরও কয়েকজন দাঁড়িয়ে আছে। মেহরাব আর সাকিবকে নিয়ে তখন বেশ কথা হচ্ছিল। বলা হচ্ছিল, এরা লম্বা সময় ধরে বাংলাদেশকে সার্ভিস দেবে।

তাই একবার ফিরে দেখেছিলাম- শুধু ‘হাই, হ্যাঁলো’ হয়েছিল মনে হয়; তখন তো আর জানি না যে, এই ছেলেটা একসময় বিশ্বসেরা হয়ে দাঁড়াবে!

এরপর ওই ২০০৬ সালের জিম্বাবুয়ে সফরে ওকে দলে যোগ করে ফারুক ভাই বলেছিলেন, ‘সুমন, নজর রেখো। এই ছেলেটা কিন্তু জিনিয়াস।’

বলাই বাহুল্য, ফারুক ভাই সেদিন ভবিষ্যৎ দেখতে পেয়েছিলেন। আমাকে অবশ্য খুব একটা নজর কখনোই রাখতে হয়নি। সেই আসলে কিছুদিনের মধ্যে নিজেকে প্রমাণ করে জায়গাটা শক্ত করে ফেলেছে। আর যেভাবে সে নিজের জায়গা করে নিয়েছে, এটাই আসলে সাকিবকে বর্ণনা করতে যথেষ্ট।

সাকিব যখন দলে এলো, ওই সময়ে একটা বাঁহাতি স্পিনিং অলরাউন্ডারের আসলে দলে কোনো জায়গা থাকার কথা নয়। দলে রফিকের মতো সিনিয়র স্পিনার আছে; যে কিনা মোটামুটি ব্যাটও করতে পারে। রাজ তখন দারুণ ফর্মে। এর মধ্যে তৃতীয় বাঁহাতি স্পিনারের তো এমনিতেই নিজের জায়গা নিয়ে সন্দেহে থাকার কথা।

কিন্তু সাকিবের মধ্যে আমি একটা মুহূর্তের জন্য নিজেকে নিয়ে ওই সন্দেহটা দেখিনি। প্রতিটি ম্যাচে নেমেছে, নিজের সেরাটা খেলেছে; আশপাশে কারা আছে, কে কী করছে; এসব নিয়ে এতটুকু দুশ্চিন্তিত না। ওর মধ্যে নিজের সম্পর্কে অসাধারণ একটা বিশ্বাস আছে। বলা ভালো, নিজের প্রতি দারুণ একটা শ্রদ্ধা আছে।

আমি বিশ্বাস করি, আপনাকে গ্রেট ক্রিকেটার হতে গেলে আপনার নিজের প্রতি শ্রদ্ধা থাকতে হবে। ভালো ক্রিকেটার হতে পারবেন আপনি চেষ্টা করলে, কিন্তু গ্রেট হতে গেলে ওই আত্মসম্মানবোধ বা নিজেকে রেসপেক্ট করাটা শিখতে হবে।

সবাই চায় যে বাকিরা তাকে একটু শ্রদ্ধা করুক। কিন্তু আপনি যদি নিজেই নিজেকে শ্রদ্ধা করতে না পারেন, তাহলে আপনি গড়পড়তাদের চেয়ে একধাপ ওপরে উঠতে পারবেন না। সেটা সাকিব পেরেছে, সাকিব জানে- হু ইস হি।

আমি সাকিবকে এখনই গ্রেট বলছি না; যদিও গ্রেট বলার মতো অনেক পরিসংখ্যান ইতিমধ্যে তার নামের পাশে বসে গেছে। তার পরও এটা উচ্চারণ করতে সময় লাগবে। আশা করি, তার ক্যারিয়ার যখন শেষ হবে, তখন সে সর্বকালের সেরাদের একজন হিসেবেই মাঠ ছাড়বে। 

সংশ্লিষ্ট বই

পাঠকের মতামত
  • Rating Star

    “ ” - Md. Tanvirul Islam Rafi

  • Rating Star

    “ ” - Md Zahid

রিভিউ লিখুন
রিভিউ অথবা রেটিং করার জন্য লগইন করুন!