এক
নীল সেডান গাড়িটার সামনে
প্যাসেঞ্জার সিটে বসেছে কিশোর। ভোরের রোদ লাগছে চোখে, কুঁচকে রেখেছে ভুরু।
ড্রাইভিং সিটে মুসা। এই
গাড়িটা কিশোরদের স্যালভিজ ইয়ার্ডে পড়ে ছিল, সারিয়ে-সুরিয়ে চলার উপযোগী করে নিয়েছে
তিন গোয়েন্দা। গাড়িটা চালিয়ে দেখে রাশেদ পাশা তো মহাখুশি। কিশোরকে বললেন, ‘যা,
তোদেরকে এক বছরের জন্য দিয়ে দিলাম এটা। যত খুশি চালা। তেলের খরচও আমিই দেব। তবে
তারপর কিন্তু আমার গাড়ি আমাকে ফেরত দিতে হবে।’ এই গাড়ি নিয়ে ইতিমধ্যেই অ্যারিজোনার
অ্যাক্সব্লেড থেকে একটা অভিযানও করে এসেছে ওরা।
‘বাঁয়ে,’ মুসাকে নির্দেশ
দিল পেছনের সিটে বসা জোসেফ হাওয়ার্ড। তিন গোয়েন্দার ক্লাসমেট। ইলেকট্রনিকস ও
কম্পিউটারের জাদুকর বলা চলে ওকে।
মোড় নিয়ে গাছপালার ফাঁকফোকর
দিয়ে যাওয়া পথ ধরে আরও কিছুদূর এগোল মুসা। গাড়িটা এনে রাখল মস্ত এক ইস্পাতের ফটকের
সামনে।
‘বন্ধ নাকি?’ জিজ্ঞেস করল
মুসা।
‘হ্যাঁ, তবে পাস দেখালেই
খুলে যাবে,’ জোসেফ জবাব দিল।
কয়েক হপ্তা ধরে চিড়িয়াখানায়
পার্টটাইম চাকরি করছে জোসেফ। হারপিটোলজিস্ট ডক্টর ডোনাল্ড রিচারের সঙ্গে কাজ করছে।
হারপিটোলজিস্ট শব্দটা জোসেফের মুখে প্রথম শুনে ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করেছিল মুসা,
‘কী লজিস্ট? মারপিটো?’
‘হারপিটো, হারপিটোলজিস্ট,
মানে সাপ বিশেষজ্ঞ। বিষধর সাপ আর তাদের বিষ নিয়ে গবেষণা করেন ডক্টর রিচার। বিশেষ
করে গোখরা জাতের সাপ। চিড়িয়াখানায় আমার কাজ হলো, ওদের জন্য খাঁচা বানানো। নতুন
সাপের জন্য নতুন নতুন ডিজাইনের।’
‘নতুন কী আসছে এখন?’
জিজ্ঞেস করেছে কিশোর।
‘একটা অস্ট্রেলিয়ান টাইগার স্নেক।
পৃথিবীর সবচেয়ে মারাত্মক সরীসৃপ। গোটা ক্যালিফোর্নিয়ায় ওই সাপ আর একটিমাত্র আছে।’
চারপাশে তাকাল জোসেফ, যেন তার গোপন কথা কেউ শুনে ফেলবে। ‘তা ছাড়া সাপটার দামও
অতিরিক্ত। সেজন্যই ওটার আগমনের খবর যথাসম্ভব গোপন রাখতে চান ডক্টর।’
‘আমি তো জানতাম দুনিয়ার
সবচেয়ে বিষধর সাপ কেউটে।’
মাথা নেড়েছে জোসেফ। ‘কেউটের
বদনাম বেশি, লোকে চেনে-জানে তো। ভারত ও মালয়েশিয়ায় প্রতি বছর বহু লোক কেউটের কামড়ে
মারা যায়।’
‘তাহলে কেউটেই বেশি
মারাত্মক,’ রায় দিয়ে ফেলেছে মুসা।
হেসেছে জোসেফ। ‘তোমার
যুক্তি ফেলে দেয়া যায় না, বেশি খুন করলে বেশি মারাত্মক, তা-ও ঠিক। তবে, কেউটের
কামড় খেয়ে চিকিৎসা ছাড়াও অনেক সময় লোক বাঁচে। কিন্তু টাইগার স্নেকের কামড় খেলে আর
সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা না করালে বাঁচার কোনো আশা নেই। মারা যাবেই। কেউটের চেয়ে
টাইগার স্নেকের বিষ চবিবশ গুণ মারাত্মক। অন্য সাপ মানুষ দেখলে পালায়, লুকিয়ে পড়তে
চায়, টাইগার ঠিক উল্টো। বাধা পেলে তো রুখে দাঁড়াবেই, না পেলেও তেড়ে আসে। ভাগ্যিস,
পৃথিবীতে ওই সাপের সংখ্যা খুব কম, আর লোকালয়ের কাছে থাকে না।’
“ ” - Bookworm
“ ” - Rakibul Dolon