এক
‘মনে হয় ওয়াটার পাম্পটা গেছে। সাংঘাতিক গরম হয়ে গেছে রেডিয়েটর।’ গাড়ির স্তব্ধ ইঞ্জিনের দিকে তাকিয়ে আছে মুসা। দরদর ঘামছে কড়া রোদে। দড়াম করে ইঞ্জিনের ওপরের খোলা হুডটা নামিয়ে দিল সে।
গলার রঙিন ওয়েস্টার্ন রুমালটা খুলে ক্যানটিন থেকে পানি ঢেলে ভিজিয়ে, মাথার ওপর চিপে দিল রবিন। কিশোরের দিকে তাকাল। চিন্তিত ভঙ্গিতে আনমনে নিচের ঠোঁট কামড়াচ্ছে গোয়েন্দাপ্রধান। মুসার দিকে ফিরল সে। ‘কী হবে তাহলে এখন?’
‘ইঞ্জিন এখনও সিজ করেনি, তবে এ অবস্থায় চালাতে থাকলে করে বসবে যে-কোনো মুহূর্তে।’ ক্যানটিনটার জন্য হাত বাড়াল মুসা। ‘দেখি, দাও!’
ক্যানটিনটা মুসার হাতে তুলে দিল রবিন।
রবিনের মতো গলার রুমাল খুলল না মুসা-রবিনের মতো সে-ও একটা রুমাল পরেছে, এই ওয়াইল্ড ওয়েস্টে এসে ওয়েস্টার্ন সেজেছে দুজনে। ক্যানটিনের খোলা মুখটা মাথার ওপর উপুড় করে ধরল।
‘আরে আরে!’ তাড়াতাড়ি বাধা দিল কিশোর। ‘ফেলছ কেন! শেষে তো খাওয়ার পানি পাবে না।’
চারপাশে তাকাল সে। শূন্য নির্জন শুষ্ক সমতল প্রেয়ারি। দূরে তামাটে আকাশ ফুঁড়ে মাথা তোলার চেষ্টা করছে যেন রুক্ষ বাদামি পর্বত। বাড়িঘর কিংবা বসতির চিহ্ন কোথাও চোখে পড়ছে না। রোদে পোড়া শুকনো ঝোপগুলো যেন এই ভয়াবহ নিঃসঙ্গতাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
‘মরুভূমি ভালোমতো শুরুই হয়নি এখনও, তাতেই এই!’ বিড়বিড় করল কিশোর।
‘আসলে এই গরমে মরুভূমিতে আসাই উচিত হয়নি আমাদের,’ রবিন বলল।
‘আমি তা বলব না, কারণ মরুভূমিতেও তো মানুষ বাস করে। আসলে ভাঙা গাড়ি নিয়ে বেরোনো উচিত হয়নি।’
‘কিন্তু আমাদের ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের তো ধারণা ছিল এটা নিয়ে পৃথিবী সফরে বেরিয়ে পড়া যাবে,’ মুসাকে ইঙ্গিত করল রবিন।
‘ভুল বলিনি,’ মুসা বলল। ‘ইঞ্জিনের অবস্থা তো ভালোই ছিল। আসলে মরুভূমিতে আটকা পড়লে কী হবে, সেটা ভাবা হয়নি। পার্টস নিয়ে বেরোনো উচিত ছিল আমাদের। অতিরিক্ত গরমে কোন কোন জিনিসের ক্ষতি হতে পারে, সেটা খেয়াল রাখলে আর এই বিপদে পড়তে হতো না।’
‘রাখলে না কেন? ইঞ্জিনিয়ার তুমি, আমরা বুঝব কী করে কোনটা লাগবে আর কোনটা লাগবে না...’
‘এখন আর ওসব বলে লাভ নেই,’ বাধা দিল কিশোর। ‘এই বিপদ থেকে কীভাবে উদ্ধার পাওয়া যায়, সেটা ভাবা দরকার।’
‘আরও কিছুক্ষণ চলবে,’ মুসা বলল। ‘তবে কতক্ষণ চলবে, ওই সময়ের মধ্যে কোনো শহরে পৌঁছতে পারব কি না, তা বলতে পারব না।’
কিশোরদের স্যালভিজ ইয়ার্ডে পড়ে থাকা পুরনো একটা গাড়িকে সারিয়ে-সুরিয়ে চলার উপযোগী করে নিয়েছে তিন গোয়েন্দা। গাড়িটা চালিয়ে দেখে রাশেদ পাশা তো মহাখুশি। কিশোরকে বললেন, ‘যা, তোদেরকে এক বছরের জন্য দিয়ে দিলাম গাড়িটা। যত খুশি চালা। তেলের খরচও আমিই দেব। তবে তারপর কিন্তু আমার গাড়ি আমাকে ফেরত দিতে হবে।’
“ ” - Moin Khan