logo
0
item(s)

বিষয় লিস্ট

শাকুর মজিদ এর ক্লাস সেভেন ১৯৭৮

ক্লাস সেভেন ১৯৭৮
এক নজরে

মোট পাতা: 170

বিষয়: আত্মজীবনী

যাবার আগে

আমাদের গ্রামের স্কুলে সে সময় একটা দৈনিক পত্রিকা আসতো। ইত্তেফাক। প্রতিদিন ডাকপিয়ন এসে দিয়েযেতো। ঢাকায় যেদিন প্রকাশ পেতো, তার তিনদিন পরে আসতো আমাদের স্কুলে। স্যাররা খুব মনোযোগদিয়ে খবর পড়তেন। বাবা বলে দিয়েছিলেন, ক্যাডেট কলেজের রেজাল্ট ইত্তেফাক পত্রিকায় ছাপা হবে।সুতরাং অফিসে ইত্তেফাক পত্রিকা এলেই আমি শফিক স্যারকে জিজ্ঞেস করতাম, ‘স্যার আমার রিজাল্টবারইছেনি?’

শফিক স্যার আমার খুব প্রিয়। তিনি স্কুলের কেরানী। আবার আমার অংকের প্রাইভেট টিউটরও। কিন্তুবার বার আমার কাছ থেকে এই প্রশ্ন শুনে স্যার খুব বিরক্ত হতেন। মাঝে মাঝে বলতেন, - ক্যাডেট কলেজেবড়লোকদের ছেলেরা চান্স পায়। ভেতরে ভেতরে রেজাল্ট ঠিক হয়ে যায়। পেপারে টেপারে এগুলো ছাপাহয় না। তুমি চান্স টান্স পাবা না। ক্লাসের পড়ায় মন দাও। নতুন বই কেনো।

মে মাস হয়ে গেছে, আমি নতুন ক্লাসের বই কিনি না। অপেক্ষা করি- ক্যাডেট কলেজের ভর্তি পরীক্ষাররেজাল্টের জন্য।

এর আগের কিছু কথা বলি-

১৯৭৭ সালের মে বা জুন মাস হবে। এসময় বাবা বাড়ি আছেন। একদিন দুপুর বেলা নাজমুল মামা এসেহাজির। নাজমুল মামা আমাদের গ্রামের ক্যামেরাম্যান। সম্পর্কে তিনি আমাদের মামা হন। তিনি কাঁধেভারি, মোটা একটা ক্যামেরা ঝুলিয়ে সাইকেল করে ঘুরে বেড়ান। কেউ খবর দিলে তার বাড়িতে গিয়ে ছবিতুলে দেন। লন্ডন আর দুবাই যাবার জন্য হাফ ফটোর দরকার পড়ে। এর আগে আমাদের নানা বাড়িতেএসেছিলেন নাজমুল মামা। নামাজ পড়ার সাদা শাড়ি পেছনে ঝুলিয়ে তার সামনে একজন একজন করেবসিয়ে ছবি তুলেছিলেন।

সেদিন নাজমুল মামাকে দেখে আমি অবাক হয়েছিলাম। বললেন, চেক চেক শার্ট পরে আসতে, আমার ছবিতোলা হবে।

আমি সজ্ঞানে কখনো ছবি তুলেছি বলে মনে পড়ে না। একটা ছবি আমাদের ঘরে ফ্রেম করা আছে। বাবা-মার সাথে  বছর বয়সের আমি। যুদ্ধের আগের বছর বাবা একবার মাকে চট্টগ্রামে নিয়ে গিয়েছিলেনজাহাজ দেখাবার জন্য। সে সময় একটা ফটো তোলা হয়েছিল  আমার মাথায় টুপি, হাতে ঘড়ি। ছবিতোলার জন্য ঘড়িটা নাকি আমার খুব দরকার ছিলো। কারণ আগেরদিন স্টুডিওতে গিয়েও সবাই ছবি নাতুলে ফেরত এসেছিলেন আমার টুপি আর এই ঘড়িটি ছিল না বলে। টুপি আর ঘড়ি কেনা হলো পরের দিন,তারপর এই ছবিটি তোলা।

সেই ঘড়িওয়ালা ছবিটি আমি এখনও মাঝে মাঝে দেখি।  বছর বয়সে তোলা আমার জীবনের প্রথমছবি।

কিন্তু পাসপোর্ট সাইজের এই হাফ ফটো আমার তখনও ছিলো না। আমাদের চাচার ঘরের চুনের দেয়ালেরসামনে একটা টুলের উপর আমাকে বসিয়ে রেখে নাজমুল মামা তার ক্যামেরার দিকে অপলক আমাকে চেয়েথাকতে বলেন। চোখের পাতা বন্ধ করা যাবে না। অনেক্ষণ থাকার পর বলেন, ঠিক আছে। শেষ।

আমি বলি- এটা হাফ না ফুল ছবি। নাজমুল মামা বললেন, হাফ ছবি। আমি বলি, আমার একটা ফুল ছবিতুলেন।

ফুল ছবি তোলার জন্য আম্মা আর নুরুকে বসানো হল আমার পাশে। লতিফ আর শবনম  দৌড়াদৌড়িকরছিল। ওদেরও ডেকে আনা হলো ছবি তোলার জন্য। দূরে সুয়াই ভাই দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি বলেন- ফুলছবিতে একসাথে অনেকেই ছবি তুলতে পারে, খরচ এক। তাই তিনিও এলেন ফ্রেমে। তোলা হয়ে গেল ছবি।

বাবা তখন নাজমুল মামাকে বল্লেন- আমার ছেলেকে সামনের বছর ক্যাডেট কলেজে পরীক্ষা দেয়াবো,এজন্য  ছবি।

আমি এই প্রথম ক্যাডেট কলেজ শব্দ দুটো শুনি। কিন্তু তার মানে বুঝি না। দাদাকে প্রশ্ন করি, দাদাও জানেননা। কিন্তু বুঝতে পারি তিনি এই বিষয়টি খুব সিরিয়াসলি নিয়েছেন। এমনিতে আমার প্রথম শিক্ষক ছিলেনআমার দাদা। তার কোলে বসে বসে আমার ইংরেজি বর্ণমালা আর ইংরেজি ছড়া শেখা। জাহাজে চাকরিরসুবাদে অনেক ইংরেজিও তিনি জানেন। কারো কারো সাথে ইংরেজিতে তাকে কথা বলতেও শুনেছি। কিন্তুএই শব্দযুগলের কী মানে হতে পারে তিনি আমাকে বলতে পারেন না। শুধু বলেন- ক্যাডেট মানেতোমিলিটারী ছাত্র, তোর বাপ কি তোকে মিলিটারী স্কুলে পাঠাবে?

বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার জন্যই দাদা পরদিন ফজরের নামাজ পড়েই রওয়ানা দিলেন ওয়ালীউল্লাহস্যারের বাড়িতে। ওয়ালীউল্লাহ স্যারের বাড়ি নোয়াখালিতে। কিন্তু তিনি এই গ্রামের মডেল প্রাইমারী স্কুলেবহু বছর ধরে পড়ান। পূর্বপারের এক বাড়িতে লজিং থাকেন। বিয়ে করেন নি  বারোমাস একটা স্ট্রাইপেরভারী ব্লেজার পরে থাকেন। কথা বলেন নোয়াখালি আর সিলেটের আঞ্চলিক ভাষার মিশ্রনে।

তিনি নাকি দাদাকে বলেছেন- এটা এক ধরনের জেল স্কুল। অমনোযোগী ছেলেদের ওখানে কড়া শাসনেরমাধ্যমে লেখাপড়া করানো হয়। পড়ালেখা ভালো, তবে শাস্তিও পেতে হয় অনেক। এই স্কুলের বাউন্ডারীরবাইরে কেউ বেরুতে পারে না।

এমন কথা আম্মার কানে আসার পর দেখি তাঁর মুখ কালো হয়ে গেছে। বাবার সাথে এই ব্যাপারে তার কীযেনো কথাও হয়েছে।

তবে এটুকু আলোচনায় সে সময়কার আলোচনা থেমে গিয়েছিল যে, ওখানে ভর্তি হতে পারাটা সহজ নয়।অনেক পরীক্ষা দিয়ে সারা দেশ থেকে ভালো ছাত্রদের বেছে নিয়ে মাত্র ৫০জনকে এক একটি কলেজে ভর্তিকরায়। ৪টি ক্যাডেট কলেজে একই দিনে ২০০ ক্যাডেট বছরে ভর্তি হয়। চান্স পাওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেয়াহবে, যাবে কি যাবে না। তার আগ পর্যন্ত আমার কাজ সিলেবাস অনুযায়ী নিজে নিজে পড়া আর ভর্তিপরীক্ষার জন্য তৈরী হওয়া। পরীক্ষা হবে বাংলা, ইংরেজী, অংক আর সাধারণ জ্ঞানের। এগুলোতে পাশকরলে তবে মৌখিক পরীক্ষা।

সংশ্লিষ্ট বই

পাঠকের মতামত
  • Rating Star

    “ ” - Quamrun Nahar

রিভিউ লিখুন
রিভিউ অথবা রেটিং করার জন্য লগইন করুন!