গণহত্যাযজ্ঞের শিকার যেকোনো জনগোষ্ঠীই কিছুটা অতিরঞ্জনের আশ্রয় নেয়। কিন্তু বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বর্বর হানাদারদের সৃষ্ট নরমেধযজ্ঞকে কোনো ক্রমেই অতিরঞ্জিত বলা যাবে না। পাকিসেনারা এদেশেরই কিছু দালালদের সহযোগিতায় মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস যে হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটের তাণ্ডবলীলা চালিয়েছে তা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন জার্মান একনায়ক হিটলারের বর্বর নাৎসীবাহিনীর বর্বরতাকেও হার মানায়। পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড এবং নৃশংসতার দিক বিচারে ইতিহাস যাদের নরপশু হিসেবে চিহ্নিত করেছে সেই চেঙ্গিস-হালাকুদের বেমালুম হারিয়ে দিয়েছে পাকি সেনাবাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার-আলবদর-আলশামস। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যাকে বিভিন্ন সময় ‘মানবেতিহাসের জঘন্যতম হত্যাযজ্ঞ’, ‘ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম হত্যালীলা’ ইত্যাদি বিশেষণে বর্ণনা করা হলেও, বস্তুত এ বিশ্লেষণও কম হয়ে যায় তাদের নৃশংসতার তুলনায়।
স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে সব সরকারই সচেষ্ট হয় রাজাকারদের পুনর্বাসিত করতে। মানবেতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যার পরিকল্পনাকারী মালেক মন্ত্রিসভার সদস্য, জামায়াতে ইসলামী, কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটি, মুসলীম লীগ, পিডিপি, নেজামে ইসলাম প্রভৃতির নেতাসহ মূল দালালরা জেল থেকে বেরিয়ে আসে। শুধু তা-ই নয়, একে একে প্রায় সবকটা শীর্ষ রাজাকার রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী সহ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পুনর্বাসিত হয়। এদের সম্পর্কে দেশপ্রেমিক জনগণকে সচেতন করতে ২০১৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হয় ‘রাজাকারের কীর্তিকথা (১ম খণ্ড)’। বইটি সম্পাদনা করেন দেবজ্যোতি রুদ্র।